ওয়ারেন, ১৪ ফেব্রুয়ারী : ‘ভালোবেসে সখী নিভৃত যতনে/ আমার নামটি লিখো তোমার মনের মন্দিরে/ আমার পরানে যে গান বাজিছে/ তাহার তালটি শিখো তোমার চরণমঞ্জীরে…..আমার আকুল জীবনমরণ/ টুটিয়া লুটিয়া নিয়ো তোমার অতুল গৌরবে-‘ রবিঠাকুরের এ গানের মতোই প্রগাঢ় অনুরাগে প্লাবিত হবে আজ লাখো কোটি হৃদয়। আজ সেই ভালবাসার দিন। বিশ্ব ভ্যালেন্টাইনস ডে বা ভালোবাসা দিবস।
মানুষে মানুষে বন্ধুত্ব, মমতা ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যয়ে নানা আয়োজনে সারা বিশ্বে পালিত হবে দিনটি। ভালোবাসার শর্ত হলো বিশ্বাস, আস্থা ও বন্ধুত্ব। এছাড়া চিন্তা, রুচি ও স্বার্থের ঐক্যই হলো ভালোবাসার আরেক শর্ত।
এই দিনে স্থান ও ব্যক্তিভেদে রয়েছে ভালোবাসার রকমফের থাকলেও মানবজীবনে এর আবেদন শাশ্বত। কী প্রাচ্য, কী পাশ্চাত্য- কবিতা, গান আর পঙ্ক্তিমালায় অব্যক্ত ভালোবাসা প্রকাশের পথ খুঁজে নেয় শাশ্বত প্রেম। হৃদয়ের ব্যাকুলতা জানানোর যেমন রয়েছে বিভিন্ন উপলক্ষ, তেমনি ভিন্নতা রয়েছে প্রকাশ ভঙ্গিতেও। পাশ্চাত্যে রোমিও জুলিয়েট, জিম ও ডেলা, অর্ফিয়ুস-ইউরিডিস, মধ্যপ্রাচ্যে সিরিন-ফরহাদ, লাইলি-মজনু, ইউসুফ জোলেখার প্রেম কাহিনি এখনো ভালোবাসার উদাহরণ হয়ে আছে। বাংলায় চন্ডিদাস ও রজকীনি, বেহুলা ও লক্ষিন্দরের গল্প ভালোবাসার মিথ।
ভালোবাসা নিয়ে অজস্র কবিতা আর গান সুরে-বেসুরে শোনানো হবে প্রিয়জনকে। প্রিয়তমার হাত ধরে কিংবা পাশে বসে অনেকেই রচনা করবে নিজেদের ভবিষ্যৎ। হয়তো এদিনেই বিভেদ ভুলে মিলন হবে দুই বন্ধুর। কেউবা অণুপ্রাণিত হবে সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসায়। মুঠোফোনের মেসেজ, ই-মেইল অথবা ফেসবুকের চ্যাটিংয়ে খুঁজে পাবে নতুন দিনের ঠিকানা।
এ দিনে চকলেট, পারফিউম, বই ইত্যাদি শৌখিন উপঢৌকন প্রিয়জনকে উপহার দেওয়া হয়। তবে ভালোবাসা প্রকাশে সবার আগে জায়গা নিয়ে এসেছে ফুল। কথিত আছে, ২৬৯ কিংবা ২৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমান সম্রাট ক্লডিয়াস মৃত্যুদন্ড দেন সেন্ট ভ্যালেইন্টাইনকে। কারো মতে, অন্ধপ্রেমিকার চোখের দৃষ্টি ফেরাতেই জীবন দিতে হয়েছে তাকে। কেউ বলে, বিয়ে প্রথা নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে নিজে বিয়ে করে বিদ্রোহী হন তিনি। আবার কারো মতে, রোগীর সেবা আর খ্রিস্টধর্ম প্রচারের অপরাধে জীবন দিতে হয় চিকিৎসক ভ্যালেন্টাইনকে।
জীবনের পরিসমাপ্তির মধ্য দিয়ে প্রেমের প্রতীক হয়ে উঠেন সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন। ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম পোপ জুলিয়াস ঘোষণা করেন ভ্যালেন্টাইন ডে। তখন থেকে ক্রমেই বাড়ছে ভালোবাসা দিবস পালনের পরিধি। প্রতিনিয়তই ভালোবাসার সংজ্ঞা বের করছেন যে যেমন উপলব্ধি করেন। চিরায়ত বন্ধন আর বিশ্বাসের সম্পর্কের নামই ভালোবাসা। ভালোবাসার শুভেচ্ছা শুধু প্রেমিক-প্রেমিকাই নয়, প্রযোজ্য বাবা-মা- ভাইবোন, বন্ধু সবার ক্ষেত্রেই। ‘ভালবাসা’ শব্দটি খুব সহজেই সকলের সহজাত প্রবৃত্তির সাথে মিশে যায়। কেননা জন্মের পর থেকেই মানুষের বেড়ে ওঠা এই ভালবাসাকে কেন্দ্র করেই। আর তাই ভালবাসার দিনটিকে নিয়ে সকলের ভাবনাটাও থাকে বিশেষ। আজকের এই বিশেষ দিনের প্রত্যাশা, কেবল নর-নারীর মধ্যে নয়, বিশ্বজুড়ে মানুষে মানুষে ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়ুক। যুদ্ধ কিংবা হানাহানি নয়, ভালোবাসা দিয়েই মানুষ জয় করুক সবার হৃদয়।
দিনটিকে ঘিরে মিশিগানে নানা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। শুক্রবার থেকে রোববার এই তিনদিন থাকছে নানা অনুষ্ঠান। এই দিবসটি যুক্তরাষ্ট্র বা পাশ্চাত্য সমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। বর্তমানে এই দিবসটি দেশে দেশে আনন্দ উন্মাদনার সঙ্গে পালন হয়। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মানুষেরা এই দিবস উপলক্ষে এই দিনে প্রায় কয়েক কোটি ডলার ব্যয় করে। ভালবাসা দিবসের জন্য মানুষেরা কার্ড, ফুল, চকোলেট ও অন্যান্য উপহার সামগ্রী ক্রয় করে। যুক্তরাষ্ট্রে এই দিনে প্রায় আনুমানিক ৩ কোটি শুভেচ্ছা কার্ড আদান-প্রদান করা হয়। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে সুপ্রভাত মিশিগান পক্ষ থেকে সকলকে অনেক অনেকে ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan